Table of Contents
শিক্ষাসফরের গুরুত্ব রচনার সংকেত
- ভূমিকা
- শিক্ষাসফরের গুরুত্ব
- শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্য
- শিক্ষাসফরের সাংগঠনিক গুরুত্ব
- শিক্ষাসফর ও দেশভ্রমণ
- শিক্ষাসফর ও জাতীয়তাবােধ
শিক্ষাসফরের গুরুত্ব রচনা লিখন
ভূমিকা:
দ্বিবিধ উপায়ে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার জ্ঞানের ভাণ্ডারকে পরিপূর্ণ করে । ১. বই পড়ে সে অর্জন। করে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তত্ত্বীয় জ্ঞান; ২. শিক্ষাসফরের মাধ্যমে সে অর্জন করে তত্ত্বীয় জ্ঞানের বাস্তব উপলব্ধি । শিক্ষার্থীর জানার আগ্রহ অসীম। সে চায় যেকোনাে অর্জিত জ্ঞানের বাস্তব অভিজ্ঞতা, তাই শ্রেণিকক্ষে বইয়ের মাধ্যমে সে যে জ্ঞান অর্জন। করে তার প্রত্যক্ষ ও ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সে ছুটে যায় প্রকৃতির কাছে, জীবনের মুক্ত অঙ্গনে। শিক্ষার বাস্তব উপলদ্ধির জন্য মানব মনে যে আগ্রহ, তার জন্য প্রয়ােজন হয় শিক্ষাসফরের । শিক্ষাসফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে অর্জন করে প্রত্যক্ষ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা। ফলে গ্রন্থপাঠে অর্জিত জ্ঞান ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, দুয়ে মিলে অর্জিত হয় শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা।
শিক্ষাসফরের গুরুত্ব:
শিক্ষার্থীর জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষাসফরের গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রেণিকক্ষের সীমিত পরিসরে শিক্ষার্থী বইয়ের মাধ্যমে জানতে পারে নানা অজানা তত্ত্ব। আর শিক্ষাসফরে গিয়ে তারা অধীত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত নানা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে । বইয়ের মাধ্যমে তারা কোনাে বিষয়ে যে ধারণা পায়, শিক্ষা সফরের মাধ্যমে তার সাথে প্রত্যক্ষ যােগাযােগ ঘটে ফলে তাদের অর্জিত শিক্ষা অধিকতর সমৃদ্ধ ও ফলপ্রসূ হয়। কেননা শ্রেণিকক্ষের মাধ্যমে মেধার সার্বিক বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে শিক্ষাসফরের বিকল্প নেই। নির্দিষ্ট পরিসরে অর্জিত জ্ঞানের তুলনায় বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের গভীরতা অনেক বেশি।
শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্যঃ
আমাদের এ পৃথিবী বিচিত্র রহস্যে পরিপূর্ণ। দেশে দেশে ছড়িয়ে আছে কত বিচিত্র স্থান, বিচিত্র জাতি, বিচিত্র জীবনধারা, বিচিত্র সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তার ইয়ত্তা নেই। প্রকৃতির যে কত বৈচিত্র্য, কত অফুরন্ত বৈভব তা প্রকৃতির সান্নিধ্যে না গেলে বােঝা যাবে না। দেশ-বিদেশের ইতিহাস সম্পর্কেও আমরা বইয়ে যে ধারণা লাভ করি তার পূর্ণতা পেতে পারি নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিলালিপি, অনুলিপি বাস্তবে দেখে। বইয়ের মাধ্যমে যে মহৎ উপলব্দি আমরা পাই, তাকে পূর্ণ ও সার্থক করতে হলে প্রয়ােজন বাস্তব অভিজ্ঞতা। আর এ অভিজ্ঞতা অর্জন করানেই শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের উক্তি প্রণিধানযােগ্য:
‘প্রত্যক্ষ বস্তুর সহিত সংস্রব ব্যতীত ওনই বলাে, চরিত্রই বলাে, নির্জীব ও নিস্ফল হতে থাকে। ‘
উন্নত বিশ্বে শিক্ষাসফর ব্যতীত শিক্ষাকে কল্পনাই করা যায় না। কেননা অধীত বিষয়ের তত্ত্বীয় উপলব্ধিকে শিক্ষাসফরের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর কাছে পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করা সেসব দেশের শিক্ষাপদ্ধতি। অর্থাৎ শিক্ষাসফর ব্যতীত শিক্ষার্জন অসম্পূর্ণ থেকে যায় । বলা যায় কোনাে বিষয়ে মনের উপলব্ধিকে বাইরের জগতের সাথে যােগাযােগ ঘটানাের মহান ব্রতই পালন করে শিক্ষাসফর।
শিক্ষাসফরের সাংগঠনিক গুরুত্ব:
শিক্ষাসফর কেবল শিক্ষাকে গভীর ও ফলপ্রসূ করে না, এর সাংগঠনিক গুরুত্বও অনেক নির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষাসফরের আয়ােজন করতে হয় । যেমন শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণকারীদের ঠিক করে নিতে হয় তারা কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে, কী খাবে, ককী তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে, কখন যাত্রা করতে হবে ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে তাদের ভেতরে দলগত কাজের উদ্যোগ ও কর্ম সম্পাদনের অভিজ্ঞতা জন্মে। আবার এক সাথে কাজ করতে গিয়ে পরস্পরের প্রতি সহযােগিতার মনােভাবও সৃষ্টি হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যেও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষাসফরের সুশৃঙ্খল পরিচালনার মধ্য দিয়ে জীবনের নানা ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের স্পৃহাও তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
শিক্ষাসফর ও দেশভ্রমণ:
শিক্ষাসফর ও দেশভ্রমণ দুটোরই উদ্দেশ্য জীবন ও জগৎ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন। তবে দুটোর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষাসফরের সাথে সম্পর্ক হলাে শিক্ষার্জনের, আর দেশভ্রমণের সাথে সম্পর্ক হলাে আনন্দ লাভের। অর্থাৎ দেশভ্রমণে আনন্দই মুখ্য, কিন্তু শিক্ষাসফরে আনন্দ মুখ্য নয়। যেমন পাহাড়পুর, সােনারগাঁ কিংবা ময়নামতিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ইতিহাস বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের সাথে বাস্তব নিদর্শনের মেলবন্ধন রচনা করবে। আর যিনি কেবল ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সেখানে যাবেন তার কাছে ঐতিহাসিক এসব নিদর্শনের সৌন্দর্য উপভােগই প্রধান হয়ে উঠবে। আবার ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের দৃষ্টিনন্দিত সৌন্দর্যই প্রধান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখানে এসে সামুদ্রিক পরিবেশ, সামুদ্রিক প্রাণী ও সামুদ্রিক মাছের সাথে পরিচিতি লাভ করে। এককথায়, শিক্ষাসফর আনন্দপিয়াসী মানুষের ভ্রমণ বিলাসিতা নয়, তা শিক্ষারই একটি প্রধান অঙ্গ।
শিক্ষাসফর ও জাতীয়তাবােধ:
আজকের যারা শিক্ষার্থী, তারাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। ফলে দেশের নানা বিষয় সম্পর্কে তাদের জানতে হবে, দেশের অবস্থা উপলব্ধি করতে হবে। শিক্ষাসফর এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাসফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বিষয়ে জানতে পারে। জানতে পারে দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ, সম্ভাবনা,সীমাবদ্ধতা, শিল্পোন্নয়ন ও শিল্পসমস্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্পর্কে। দেশের সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাবার সুযােগও তারা পায়। ফলে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তারা মমত্ব অনুভব করে এবং দেশ গড়ার স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়।
শিক্ষাসফরের প্রক্রিয়া:
গ্রন্থপাঠে অর্জিত জ্ঞানের পূর্ণতা প্রদানের জন্যই শিক্ষাসফরের আয়ােজন করা হয়। এটি সাধারণত শ্রেণিভিত্তিক কিংবা দলীয়ভাবে সম্পাদিত হয়। নির্ধারিত বিষয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে নির্বাচিত হয় সফরের স্থান। শিক্ষাবর্ষের যেকোনাে নির্দিষ্ট সময়ে কিংবা কোনাে ছুটিতে শিক্ষাসফরের পরিকল্পনা করা হয়। এর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ তহবিল গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকগণ সফরের নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেন।
উপসংহার:
শিক্ষাকে জীবনমুখী ও বাস্তবানুগ করতে হলে শিক্ষাসফরের বিকল্প নেই। অধীত বিষয়ের বাস্তব-ভিত্তিক জ্ঞান প্রদান করে শিক্ষাসফর । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধ পরিসরে অর্জিত শিক্ষা এবং শিক্ষাসফরের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাল শিক্ষার মেলবন্ধনে অর্জিত হয় শিক্ষার্থীর প্রকৃত ও পূর্ণাজ্ঞা শিক্ষা । তাই শিক্ষাসফর শিক্ষার্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।