Table of Contents
প্রশ্নঃ শিশুশ্রম নিয়ে বাংলা অনুচ্ছেদ লিখ ।
উত্তরঃ
শিশুশ্রম অনুচ্ছেদ ১
“ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”—অর্থাৎ শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজ যারা শিশু আগামী দিনে তাদের উপরই ন্যস্ত হবে দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব। কিন্তু নানা কারণে শিশুরা আজ উপযুক্ত পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত। জীবিকার প্রয়ােজনে তারা শ্রমদানে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে অনেক শিশুর সুন্দর শৈশব ও বিকশিত জীবনের সবচেয়ে বড় বাধা এ শিশুশ্রম। শিশুশ্রমকে শিশুদের জীবনের একটি অমানবিক অধ্যায় বলা যায়। শিশুশ্রমের কারণে শিশুদের স্বাভাবিক মেধার কোনাে বিকাশ ঘটে না। ফলে শিশুরা অন্ধকারে থেকে যায়। শিশুশ্রম শিশুদের শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয়। স্বাস্থ্য দুর্বল হলে তারা পুষ্টিহীনতায় ভােগে এবং রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কমে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রমশক্তির শতকরা প্রায় ১২ ভাগই শিশু। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে শিশুদের এক বিরাট অংশ শ্রমদান করতে বাধ্য হয়। এ দেশের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এসব মানুষ বাধ্য হয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য তাদের সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ নানা কাজে নিয়ােজিত করে। রাজনৈতিক বিপর্যয়, সাম্প্রদায়িকতা, উদ্বাস্তু জীবনের ছিন্নমূলতা, অভিভাবকদের নৃশংস আচরণ, মাতাপিতার পঙ্গুত্ব ইত্যাদি কারণে শিশুশ্রমের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুশ্রমের কারণে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও অর্ধেকের বেশি শিশু অকালে ঝরে পড়ে। অর্থাৎ শিশুশিক্ষার সাথে শিশুশ্রমের একটি বিপরীতমুখী সম্পর্ক রয়েছে। আবার শিশুরা কর্মক্ষেত্রে যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে, তা তাদের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে তারা যেমন তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি জাতি ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই শিশুশ্রম বন্ধের জন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি শিশুবান্ধব সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। শিশুশ্রম ও অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই শিক্ষিত ও সচেতন নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠবে, যারা দেশের বােঝা না হয়ে বরং সম্পদ হয়ে দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে।
শিশুশ্রম অনুচ্ছেদ ২
শিশুশ্রম বলতে এমন কাজে শিশুকে ব্যবহার করা বােঝায় যে কাজ শিশুদের উপযােগী নয়। শিশুশ্রম হচ্ছে মানবাধিকার ভঙ্গের এক নিকৃষ্ট ব্যবস্থা। এটি একটি বেআইনী কাজ সত্ত্বেও আমাদের দেশে শিশুশ্রমের তালমাতাল অবস্থা বিরাজমান। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির মতাে মানবাধিকারের সুবিধা বঞিত। এ সময়ে তাদের স্কুলে যাবার কথা, তাদের কাধে থাকবে কুল ব্যাগ অথচ এ সময়ে তারা কাজের ভারবহন করছে। তারা হােটেল, চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট, কারখানা ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে কাজ করছে। কেউ কেউ পথের হকার ও গৃহকাজে নিয়ােজিত রয়েছে। তারা অনেক দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন ভােগ করে থাকে। তাদের নিয়ােগকর্তাগণ তাদের মজুরি থেকেও অনেক সময় বঞ্চিত করে থাকেন। এমনকি কেউ কেউ অনেক কম বেতনেও কাজ করে থাকে। তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে থাকে। কিন্তু নিয়ােগকর্তার ভালােবাসা ও সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত হয়। তারা পুষ্টিকর খাবার ও বস্ত্রের সংস্থান করতে পারে না। ফলস্বরূপ তারা অপুষ্টি ও নানা রােগে ভুগে থাকে। তারা অমানবিক জীবন-যাপন করে। শিশুশ্রম বন্ধ হওয়া অবশ্য প্রয়ােজন। সরকারকে অবশ্যই তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য এগিয়ে আসা উচিত। সরকার অবশ্যই শিশু পুর্ণবাসন নিশ্চিত করবে। জনসচেতনতা অবশ্য প্রয়ােজনীয় এবং এ ব্যপারে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শিশুশ্রম অনুচ্ছেদ ৩
বর্তমান ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শিশুশ্রম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থসামাজিক সমস্যা। সার্বিক বিশ্লেষণে শিশুশ্রম’ বলতে, শিশুদের শ্রমের সময় প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন কাজে এবং পরােক্ষভাবে গার্হস্থ্য শ্রমে ব্যয় করাকে বােঝায়। এই একুশ শতকেও শিশুশ্রম বিষয়টি বিতর্কিত ও ব্যাপকভাবে বহুমুখী এবং যার স্বরূপ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল । আইএলও’র হিসাব অনুসারে পৃথিবীতে শ্রমে নিযুক্ত রয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ৬০ লক্ষ শিশু। এদের মধ্যে ১০ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লক্ষ বিশ্বের প্রতি ছয় জন শিশুর মধ্যে একজন শিশুশ্রমে নিযুক্ত। দাসত্ব, বন্ধক, যৌননিপীড়ন, সশস্ত্র সংঘাত প্রভৃতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়ােজিত শিশুর সংখ্যাও প্রচুর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাের (বিবিএস) ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে শূন্য থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৭ লাখের বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ৩৫ লক্ষ শিশু নানা ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ২০১১ সালের সরকারি জরিপ মতে, ৪৫ লক্ষ শিশু নিষিদ্ধ শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ উপেক্ষা করে শিশুদের দিয়ে জোর করে নানা কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যেমন— ইটভাঙা, ওয়ার্কশপ ও গ্যারেজে কাজ করা, অন্যের বাড়িতে কাজ করা, হােটেল ও চা-স্টলে কাজ করা, শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা, কুলিগিরি, অফিস-আদালতে খাবার পৌছানাে, বাস-টেম্পাের হেলপারি ইত্যাদি। শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ঘােষণা করে। এই ঘােষণায় ১৮ বছরের নিচে সকল মানবসন্তানকে শিশু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। শিশু অধিকার সনদ-১৯৮৯’-এর উল্লেখযােগ্য বিষয় হলাে— ১. শিশু অধিকার বাস্তবায়ন; ২. পরিচয় সংরক্ষণ; ৩, মত প্রকাশের স্বাধীনতা; ৪. সামাজিক নিরাপত্তা; ৫. শিশু স্বাস্থ্যের প্রাধান্য; ৬. বৈষম্যহীনতা; ৭. অবৈধ স্থানান্তর রােধ; ৮. অক্ষম ও উদ্বাস্তু শিশু; ৯. সামাজিক পর্যালােচনা; ১০. মাতাপিতার সঙ্গে অবস্থানের অধিকার ইত্যাদি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলাে এ সনদের বিষয়বস্তুগুলাে অনুসরণ করলেও বাংলাদেশের মতাে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলাে তা অনুসরণ করতে পারছে না। অপরিসীম দারিদ্র্য আর সামাজিক ও রাজনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে এদেশের শিশুদের যেমন অমানবিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে তেমনি বঞ্চিত হচ্ছে নায্য শ্রমমূল্য থেকেও। এর ফলে শিশুরা সমাজ ও রাষ্ট্রের এক পজ অংশ হিসেবে পরিণত হচ্ছে, যা কোনােভাবেই কাম্য নয়। তাই প্রতিবছর ১২ই জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরােধ দিবস’। বাংলাদেশ শিশুশ্রম নীতি ২০১০-এ বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কর্তব্য দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ শিশুরা যাতে এই ‘শিশুশ্রম’ নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় তার ব্যবস্থা করা।
শিশুশ্রম অনুচ্ছেদটি কেমন হয়েছে ? নতুন কিছু সংযোজন করা যায় বা বাদ দেওয়া প্রয়োজন? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
6 comments
eto boro kan vai.
Choto kore nen..apaar jodi choto jinish valo lege thake.😀
Valo lagse kako…
2nd onuched ta khub vlo chilo 😊.
Khub vlo hoyeche
💖💖💖💖💖😄😄😄😇😇😇😇💝💝💝💘💘💘💗💗💕💕💞💞