Table of Contents
স্বাবলম্বন রচনার সংকেত (Hints)
- ভূমিকা
- স্বাবলম্বনের তাৎপর্য
- স্বাবলম্বী হওয়ার উপায়
- স্বাবলম্বনের প্রতিবন্ধকতা
- জাতীয় পর্যায়ে স্বাবলম্বন
- যুগে যুগে স্বাবলম্বী মনীষী
- শেষকথা
স্বাবলম্বন রচনা লিখন
ভূমিকা:
অন্যের ওপর নির্ভর না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানােই হচ্ছে আত্মনির্ভরতা বা স্বাবলম্বন। ব্যক্তিগত জীবনে স্বাবলম্বী না হলে অসম্মানিত জীবনযাপন করতে হয়। অন্যের গলগ্রহ জীবনযাপনের মধ্যে কৃতিত্ব নেই, আছে অগৌরব। স্বাবলম্বন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের গুণ হিসেবে বিবেচিত।
স্বাবলম্বনের তাৎপর্য:
সমাজে স্বাবলম্বী এবং অস্বাবলম্বী এমন দুজন ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আমরা অতি সহজে স্বাবলম্বনের তাৎপর্য বুঝতে পারি। অকর্মণ্য, গোঁফখেজুরে ব্যক্তি সে তার জীবনের সকল কাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিতে চায়। অন্যের ওপর তার শতভাগ নির্ভরতা চর্চা করতে গিয়ে সে তার নিজ সত্তাকে বিসর্জন দেয়। তার স্বকীয়তা এবং ব্যক্তিত্ব বলতে আর অবশিষ্ট কিছুই থাকে না। একপর্যায়ে তার জীবন এবং বেঁচে থাকা নির্ভর করে অন্যের গলগ্রহ বা অনুকম্পার ওপর। জীবনে এ অবস্থা কারাে জন্য সম্মানজনক হতে পারে না। অন্যদিকে, স্বাবলম্বী ব্যক্তি নিজে নিজের চালক বলে। পরিবারে, সমাজে তার উচু মর্যাদার অভাব হয় না। অন্যের ওপর তার নির্ভরতা নিষ্প্রয়ােজন বলে কারাে হাতের দিকে তাকে চেয়ে থাকতে হয় না। নিজের ওপর নির্ভরতা মানুষের মনেও আনন্দ আনয়ন করে। স্বাবলম্বী ব্যক্তির পক্ষে পরহিত বা কল্যাণ সম্ভব। অন্যদিকে, স্বাবলম্বী নয় এমন ব্যক্তিকে দিয়ে সমাজের কল্যাণ আশা করা বৃথা। তাই স্বাবলম্বনের আছে সুগভীর তাৎপর্য।
স্বাবলম্বী হওয়ার উপায়:
মানুষ হঠাৎ করে একদিন নিজেকে স্বাবলম্বী ঘােষণা করতে পারে না। শৈশব থেকে কৈশাের প্রতিটি ধাপেই মানুষকে স্বাবলম্বিতা অনুশীলন করে আসতে হয়। ছাত্রজীবনে কোনাে ছাত্র যদি শতভাগ শ্রেণিশিক্ষক ও গৃহশিক্ষকনির্ভর হয়ে পড়ে তাহলে এক অর্থে সে পরনির্ভর হয়ে ওঠে। তাই নিজের কাজ নিজে সম্পাদনের প্রচেষ্টা ছাত্রজীবনেই আরম্ভ করতে হবে। স্বাবলম্বী হবার জন্যে নিজকে দৃঢ়তার সাথে প্রস্তুত করতে হবে । যে মানুষ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চায় অথচ সব কিছুই সে নাগালে পেতে ইচ্ছে পােষণ করে তার পক্ষে স্বাবলম্বী হওয়া অসম্ভব। স্বাবলম্বী হতে হলে চাই আগ্রহ, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও উদ্যম। নিজের উপার্জন দিয়ে নিজকে চালনা করার বাসনা যার নেই তার পক্ষে স্বাবলম্বী হবার প্রত্যাশাই মিছে। মােট কথা সার্থক জীবনের মহিমা যাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে তাকে অবশ্যই হতে হবে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল। আত্মনির্ভরশীলতা চর্চার মধ্যেই স্বাবলম্বী হবার মূলমন্ত্র নিহিত।
স্বাবলম্বনের প্রতিবন্ধকতা:
নিতান্ত অলসতা ও জড়তা স্বাবলম্বনের প্রধান এবং প্রথম অন্তরায়। আরামপ্রিয় জীবনের নামে যারা অন্যের ওপর নির্ভর করে তাদের কাছে পরনির্ভরতাই স্বাবলম্বনের প্রতিবন্ধকতা । ভাইবােন, আত্মীয়স্বজন হাতের কাছে যাকে যখন সহজে পাওয়া যায় তাদের মাধ্যমে নিজের কাজটি যে করে নিতে চায়, তার পক্ষে স্বাবলম্বী হওয়া কঠিন। এসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে প্রবল আগ্রহ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে নিজকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। তবেই মানুষ পেতে পারে আত্মনির্ভরশীলতার তৃপ্তি ।
জাতীয় পর্যায়ে স্বাবলম্বন:
ব্যক্তির সমষ্টি দিয়েই জাতির সৃষ্টি। ব্যক্তি যদি ব্যক্তিগত জীবনে স্বাবলম্বী না হয় তাহলে জাতির কাছে সে স্বাবলম্বিতা আশা করতে পারে না। যে জাতির সকলেই কর্মঠ, সকলেই আত্মনির্ভরশীল ও প্রত্যয়ী সে জাতি অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে উঁচু সম্মানের অধিকারী। যে জাতি স্বাবলম্বী নয় সে জাতি অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট পিছিয়ে। বিশ্বে যে জাতি স্বাবলম্বী সে জাতিই আত্মনির্ভরশীল হয়েছে তাদের খাদ্যে, চিকিৎসায় এবং জীবনের প্রতিটি ধারায়। জাতি যদি স্বাবলম্বী হয় তাহলে অন্য দেশের সাহায্যের আশায় তাকে অপেক্ষা করতে হয় না। একটি দেশ বা জাতিকে তার জাতীয় গৌরবের প্রয়ােজনেই হতে হবে স্বাবলম্বী । তাই জাতীয় জীবনে স্বাবলম্বনের গুরুত্ব অপরিহার্য ।
যুগে যুগে স্বাবলম্বী মনীষী:
সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি, চিকিৎসা, বিজ্ঞানসহ নানা ক্ষেত্রে খ্যাতিমান মনীষীরা যুগে যুগে যে অবদান ও আবিষ্কার রেখে যাচ্ছেন তার মূলে আছে স্বাবলম্বনের মূলমন্ত্র। কর্তব্য ও কর্মনিষ্ঠা তাদের যথােপযুক্ত স্থানে আসীন করেছে। নেপােলিয়ান, নজরুল, মাদামকুরি, আইনস্টাইনসহ নানা মনীষীদের জীবনে স্বাবলম্বনের উদাহরণটি স্পষ্ট।
শেষকথা:
স্বাবলম্বী ব্যক্তি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যে জরুরি। স্বাবলম্বনের মধ্যে আত্মন্নোয়ন ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের বীজ লুকায়িত বলে স্বাবলম্বী জাতিই আমাদের প্রত্যাশা।