Home রচনা নারীশিক্ষা রচনা (৭০০ শব্দ) | JSC, SSC |

নারীশিক্ষা রচনা (৭০০ শব্দ) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

নারীশিক্ষা রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • নারীশিক্ষার অতীত ও বর্তমান
  • নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা
  • নারীশিক্ষা সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ
  • নারীশিক্ষা বিস্তারে করণীয় বিষয়
  • উপসংহার

নারীশিক্ষা রচনা

ভূমিকা:

মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে শিক্ষার কোনাে বিকল্প নেই। নারী’ হােক বা ‘পুরুষ’ হােক তাদের বড় পরিচয় হলাে তারা মানুষ। নারীদের মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য, উৎকৃষ্ট মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য শিক্ষার প্রয়ােজন অনস্বীকার্য। একটি আদর্শ জাতির জন্য আদর্শ মা প্রয়ােজন, চিরন্তন এ সত্যকে অস্বীকার করলে চলবে না। মা যদি শিক্ষিত না হয়, তাহলে সন্তান শিক্ষিত হবে না। সন্তান শিক্ষিত না হলে স্বাভাবিকভাবেই জাতির ভবিষ্যৎ হয় অন্ধকার। নারীশিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে জাতীয় অগ্রগতি নিশ্চিত হবে। সভ্যতার চরম উৎকর্ষের বহুমাত্রিক সুযােগ-সুবিধার চূড়ান্ত ব্যবহার করতে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

নারীশিক্ষার অতীত ও বর্তমান:

নারীশিক্ষার অতীত খুব সুখকর নয়। নানারকম সমস্যা অতীতে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে বাধাবিঘ্নের সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত ভারতে উনিশ শতকের আগে নারীশিক্ষা ছিল অবহেলিত বিষয়। তারও আগে থেকেই অবশ্য এ অবহেলার শিকড় প্রােথিত হয়। নারীরা শিক্ষার আলাে থেকে বঞ্চিত ছিল। মূলত নিম্নলিখিত কারণে

ক. ধর্মীয় অনুশাসন,
খ. কুসংস্কার;
গ. পুরুষশাসিত সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি;
ঘ, নারীদের অজ্ঞতা, ধর্মীয় ভীতি;
. সাংস্কৃতিক চেতনার অভাব;
চ. শিক্ষা সম্পর্কে নারীদের উদাসীনতা;
ছ. পরনির্ভরশীলতা।

উপযুক্ত কারণগুলাে পাকিস্তান আমলেও আমাদের দেশে বিরাজমান ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নারীশিক্ষার প্রসারে নানা উদ্যোগ গৃহীত হয় বর্তমান সময়ে নারীশিক্ষা আগের মতাে দুর্দশাগ্রস্ত না হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। এখনও আমাদের দেশে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমান হারে শিক্ষালাভ করতে পারছে না।

নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা:

নােবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে এক সেমিনারে বলেছেন, নারীশিক্ষা একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান উপকরণসমূত্রে একটি।’ নেপােলিয়ান বলেছেন,

‘Let France have good
mothers and she will have good sons’,

নারীশিক্ষার প্রয়ােজন যুগ যুগ ধরেই ছিল। বর্তমান সভ্যতার আলােকে নারীশিক্ষা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের সামাজিক, রাষ্টীয়, পারিবারিক এমনকি ব্যক্তিগত উৎকর্যের সঙ্গে নারী শিক্ষার গুরুত্ব জড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশের লােকসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এ অর্ধেক জনগােষ্ঠী যদি শিক্ষা গ্রহণ না করে, মনুষ্যত্নের গুণাবলি অর্জন না করে তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার তা অনস্বীকার্য। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রেই শিক্ষিত নারীর প্রয়ােজন। শিক্ষিত নারী তার সতীর্থ পুরুষকে নিজের শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের জন্য একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।

১.নারীশিক্ষার আদর্শ পরিবার প্রত্যাশিতভাবে গড়ে উঠতে পারছে না;
২.শিক্ষিত জনগােষ্ঠী গড়ে তােলার ক্ষেত্রে সমাজ বহুলাংশে পিছিয়ে থাকছে;
৩.অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা কাটছে না;
৪.দাম্পত্য বােঝাপড়া স্বচ্ছ হচ্ছে না;
৫.অশিক্ষিত নারী কর্মহীন বিবেচনায় দেশের বােঝা হয়ে আছে:
৬.নারীদের প্রকৃতিপ্রদত্ত গুণাগুণ বিকশিত হচ্ছে না;
৭.সামাজিক অনাচার ও পারিবারিক কলহ বাড়ছে;
৮.নারী তার নিজের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারছে না।

উপযুক্ত পরিস্থিতি আমাদের দেশে নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তাকে তীব্র করে তুলেছে। নারীশিক্ষার অনগ্রসরতার কারণে দেশের সমাজব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

নারীশিক্ষা সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ:

নারীশিক্ষা বিস্তারে স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলাে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। অবশ্য পদক্ষেপগুলাে বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই যৎসামান্য। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার সুযােগ করে দিয়েছে সরকার। তাছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও নিজেদের উদ্যোগে নারীশিক্ষা বিস্তারে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে যা খুবই আশাব্যঞ্জক। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছে । নারীর ক্ষমতায়ন ব্যবহারিক পর্যায়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে নারীশিক্ষার চলমান কর্মতৎপরতা থেকেই। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীদের আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। গৃহীত এসব ব্যবস্থা নারীর সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। তবু একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নারীশিক্ষার যে অগ্রগতি হচ্ছে তার গন্তব্য নিশ্চয়ই অনেক দূর।

নারীশিক্ষা বিস্তারে করণীয় বিষয়:

নারীশিক্ষা বিস্তারে সরকার কর্তৃক আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বেসরকারি পর্যায়েও আরও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। সবার সমন্বিত উদ্যোগই কেবল নারীশিক্ষায় সফলতা এনে দিতে পারে।নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলাের প্রতি সরকার ও অন্যান্য মহলের লক্ষ রাখা দরকার।

১.নারীশিক্ষাকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে;
২.নারীশিক্ষার বিস্তারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে;
৩.গ্রাম ও শহর বিবেচনায় উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে;
৪.অবকাঠামােগত উন্নয়নের জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে;
৫.একটি মনিটরিং সেল স্থাপন করে নারীশিক্ষার অগ্রগতি মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে;
৬.দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করতে হবে;
৭.সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে প্রয়ােজনীয় প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা রাখতে হবে;
৮.কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে;
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ৯.পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত শিক্ষক নিয়ােগ করতে হবে;
১০.নারীশিক্ষাকে উৎসাহ প্রদানের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

উপসংহার:

নারীশিক্ষা আমাদের মতাে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের মােট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তাই নারীসমাজকে অশিক্ষিত রেখে জাতীয় উন্নয়নের কথা কল্পনাই করা যায় না। এক্ষেত্রে নারীশিক্ষাকে অগ্রগণ্য কর্মসূচি দ্বারা বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে বড় ধরনের সুফল পাওয়া যাবে। দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা যথাযথভাবে সংযুক্ত করা গেলে দেশকে সমৃদ্ধির শীর্ষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব

1.5/5 - (4 votes)

You may also like

Leave a Comment