Home রচনা রচনাঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ

রচনাঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ

by Curiosityn
0 comment

ভূমিকা:

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে ২০২১ সালে। এই সালকে ঘিরে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে “ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার পদক্ষেপটি অন্যতম । উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে এটি একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকেও এর থেকে বাইরে থাকলে চলবে না। কিন্তু একটি দেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তর করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ নয় ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অর্থ:

ইন্টারনেটের সুফল সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে একটি সমাজ বা দেশকে ডিজিটাল করা যেতে পারে। “ডিজিটাল বাংলাদেশ” কী এ বিষয়কে বুঝতে হলে আমাদের আগেই জানতে হবে একটি দেশ কীভাবে ডিজিটাল দেশে পরিণত হতে পারে। একটি দেশকে তখনই ডিজিটাল দেশ (Digital Country) বলা যাবে যখন ওই দেশ ‘ই-স্টেট’ (e-state) -এ পরিণত হবে। অর্থাৎ ওই দেশের যাবতীয় কার্যাবলি যেমন-সরকার ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি প্রভৃতি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:

২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর নির্বাচনি ইশতেহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার । ফলে একটা বিশাল সংখ্যক তরুণ ভোটার তাদেরকে ভোট দিয়েছে । এখন যদি সরকার বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে, তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে তা হবে আশীর্বাদ স্বরূপ। আশার কথা এই যে, বর্তমান সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information Communication Technology বা সংক্ষেপে ICT ) উন্নয়নকে মৌলিক ইস্যু হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে ।

ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্বশর্ত:

একটি ডিজিটাল সমাজ নিশ্চিত করবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। যেখানে সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অনলাইন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটবে । তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ নিশ্চয়তা দেবে
দ্রুত ও কার্যকর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সুশাসিত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার । এক্ষেত্রে শত্তিশালী তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামো মূলভিত্তি। কঠিন বাস্তবতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ করতে গেলে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশেষ নজর দিতে হবে । যেমন-

  • শিক্ষা: বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। এই হারকে আরও বাড়িয়ে নিরক্ষরতার হারকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। কেননা শিক্ষিত মানুষ ছাড়া ডিজিটাল শব্দটি অর্থপূর্ণ হবে না। কেননা অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে প্রযুক্তি তুলে দিয়ে গণমানুষকে তার আওতায় আনা না গেলে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়া স্বপ্নই থেকে যাবে।
  • বিদ্যুৎ ঘাটতি: বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এতে প্রায় ১৩% বিদ্যুৎ ঘাটতির মুখোমুখি হতে হয়। একটি পরিপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামো গড়ে ওঠার জন্যে যথাযথ বিদ্যুতের ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন । সেক্ষেত্রে বিদ্যুত ঘাটতি কমাতে হবে।
  • নেটওয়ার্ক-কাঠামো উন্নয়নঃ ঢাকার বাইরে এখনও পর্যন্ত খুবই কমসংখ্যক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কাঠামোর আওতায় আসতে পেরেছে। ঢাকা শহরের বাইরের কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পাওয়া গেছে যে, বেশিরভাগ LANE (লেন) ঢাকাকেন্দ্রিক। এই পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পার্থক্যকে প্রতীয়মান করে।
  • ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্প্রসারণ: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্যে একটি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সব থেকে খারাপ। সর্বশেষ ২০১৭ সালে যু্ক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার হিসেবে ইন্টারনেট বঞ্চিত একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচ নম্বরে । সে অনুযারী বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ১৩% প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী । অবশ্য সরকারি হিসেবে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৭০ লাখ যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ ।
  • ইংরেজি শিক্ষার হার বৃদ্ধি: বাংলাদেশে ইংরেজিতে শিক্ষিতের হার এক শতাংশের কম যেখানে ভারত ও পাকিস্তানে এর পরিমাণ যথাক্রমে প্রায় ৬০ এবং ২০ শতাংশ । মূলত ইংরেজি ভাষা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকে তরান্বিত করছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারিনি । এজন্যেই আমাদের দেখে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন করতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে ।
  • সমুদ্রের তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ: ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সুপার হাইওয়ের যুক্ত হয়েছে সমুদ্র তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে । কিন্তু একটি মাত্র সাবমেরিন ক্যাবল প্রায়শই সমসার সম্মুখীন হচ্ছে । তবে আশার কথা হলো, সম্প্রতি SEA-ME-WE5 সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পেরেছে। এর কার্যক্রম শুরু হলে দেশের ইন্টারনেট আরও সহজলভ্য হবে আশা করা যায়।

এ ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলো নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।

অনলাইনের সুবিধাসমূহ:

বাংলাদেশের মানবসম্পদ যত বেশি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে, ততই অনলাইনের গুরুত্ব বাড়ছে। গ্লোবাল ভিলেজের আজকের এই দিনে পৃথিবীর মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যাবতীয় কাজ সমাধান করছে। অনলাইনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে ঘরে বসেই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে। পৃথিবীর বিভিন্ন তথ্য সহজেই পেয়ে যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে । চাকরিপ্রার্থীরা খুব সহজেই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির আবেদন করছে। অনলাইন ব্যাংকিং চালু হওয়ার ফলে এখন গ্রাহক যেকোনো ব্যাংক থেকেই টাকা জমাদান, উত্তোলন, বিল পরিশোধ ইত্যাদি কাজ ঘরে বসেই করতে পারছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য:

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ১. প্রধান লক্ষ্য; ২. রাজনৈতিক লক্ষ্য।

১.প্রধান লক্ষ্য:

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্তরে স্তরে এর অনুন্নত জীবনধারাকে বদলে বাংলাদেশের সমাজকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে উন্নীত করা। কার্যত এ দেশের মানুষের জীবনযাপন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা এবং জনগণের সরকারসহ সব স্তরের সব কাজকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রুপান্তর করা।

২. রাজনৈতিক লক্ষ্য:

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কিছু রাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে। নিচে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-

ক. জনগণের রাষ্ট্র:

ডিজিটাল টুলস ব্যবহারের ফলে জনগণের উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন, মৌলিক মানবিক অধিকার সংরক্ষণ, সব সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা থাকবে। এই রাষ্ট্রের জনগণের কাছে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য করা হবে।

খ. মৌলিক চাহিদা রাষ্ট্রকেই পূরণ করতে হবেঃ

রাষ্ট্রকে জনগণের ন্যুনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে । জনগণ যাতে করে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়, তার জন্য তাকে ডিজিটাল প্রযুস্তির ব্যবহার শেখাতে হবে এবং সেই প্রযুস্তি তার কাছে রাষ্ট্রকেই সহজলভ্য করতে হবে। দরিদ্র জনগণকে জ্ঞানকর্মী বা ডিজিটাল প্রযুক্তিকমী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং গ্রামে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক শিল্প-বাণিজ্যসহ কৃষি, শিক্ষা, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

গ. রাজনৈতিক ধারা:

ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো সরকার, জাতীয় সংসদসহ সব রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালনা করা যাতে জনগণ সবসময়ই সংসদ, সরকার ও রাজনীতিতে ইন্টার আ্যাকটিভ পদ্ধতিতে অংশ নিতে পারে।

ঘ. স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা:

আমাদের সমাজ এবং দেশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্তরে স্তরে আজ দুর্নীতি। রাজনীতিতে দুনীতির কথা বলার অপেক্ষা রাখে না । তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বস্তরে ডিজিটাল ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঙ. রাষ্ট্রকে গতিশীল করা:

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অন্যতম লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রযন্ত্রকে গতিশীল করা । ডিজিটাল পদ্ধতিতে অল্প সময়ে, অল্প খরচে অধিক কাজ করা যায়।

ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি:

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সরকারের কাজ করার পদ্ধতি ডিজিটাল করা, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌছানো, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল করা, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যব্যবস্থা ডিজিটাল করা, যোগাযোগব্যবস্থায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রচলন করা, তথ্যের অবাধ চলাচলের জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহণ ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন ও বাস্তবতা:

বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। আজ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধিত ব্যবহার। এটি বাংলাদেশের যোগাযোগ মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক কম। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ SEA-ME-WE4 35 সাবমেরিন ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে শহরের কিছু উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিস্ত পরিবারের সন্তানেরা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু বেশিরভার্গ জনগণই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপে গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকে অবশ্যই সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি চলমান প্রক্রিয়া এই বিশাল কর্মপদ্ধতি চালানোর জন্যে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। নিচে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলোঃ

১.ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করতে গেলে আমাদের উন্নয়নের একটি বিজ্ঞানসম্মত নকশা তৈরি করতে হবে। এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই ‘e-readiness’ প্লান তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী মানবশক্তি তৈরি করতে হবে।

২. ইন্টারনেট কাঠামোর উন্নয়ন ও ইন্টারনেটের ব্যয় সাধারণের সীমার মধ্যে এনে জনগণের জন্যে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে হবে যা বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড্ করতে সহযোগিতা করবে।
৪. জনগণকে পরিবর্তনশীল মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে এবং সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলসমূহকেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

৫. গ্রাম ও শহর অঞ্জলের মধ্যে একটি ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

৬. বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুস্তির ব্যবহার নিশ্চিত ও সহজলভ্য করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে সাজাতে হবে।

বর্তমান অগ্রগতি:

জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে সচিবালয়, সরকারি বিভাগ, অধিদপ্তর, শাখা, সিটি কর্পোরেশন এমনকি ইউনিয়ন পরিষদগুলোকেও ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়াইফাই ব্যবস্থা চালু হয়েছে । ভর্তিপদ্ধতি, প্রশাসনিক কাজ, ক্লাস পদ্ধতি ডিজিটাল মাধ্যমে করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ৮১ লাখ যার মধ্যে ৯ কোটি ২৪ লাখই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী । ওয়াইম্যাক্স গ্রহকের সংখ্যা ৪০ হাজারের আশপাশে, অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার। প্রায় ১৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে । কালিয়াকৈরে গড়ে উঠেছে সফটওয়্যার পার্ক । বিদেশ থেকে সহজে টাকা পাঠানোর জন্য চালু হয়েছে পে-পল পদ্ধতি । সরকারি বেসরকারি সকল ব্যাংক বর্তমানে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে । টেলিকমিউনিকেশন পদ্ধতিকে আরও উন্নত করার জন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ হয়েছে। এছাড়া সরকার বিভিন্ন আইসিটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যা একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে ।

একটি অশনিসংকেত :

বলতে অনেক কষ্ট লাগে এই ভেবে যে আম বাঙালি জাতি। যে জাতি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বীরের বেশে জয় করেছিল স্বাধীনতা, সেই জাতি আজ অলসতার দায়ে অভিযুক্ত। আরামপ্রিয় বাঙালি সমাজ আজ কর্মবিমুখ । সেই জাতি আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে । আর সেই সাথে এক আশঙ্কা জাগ্রত হচ্ছে যে এটি আমাদেরকে করবে আরও অলস, শুধু আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, সারা বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর দেশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের অভিমত। মানুষের সৃষ্ট প্রযুক্তি দিয়ে কাজ করাতে করাতে এমন এক সময় আসবে, যখন কাজের ক্ষুধায় উন্মত্ত দানব তার স্রষ্টা মানুষকে করবে ক্রীতদাস । কথাটাকে একটু ঘুরিয়ে দেখলেই দেখা যাবে বাস্তব সত্যটা বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতেও সত্য দাঁড়িয়েছে । আর ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে ডিজিটাল প্রযুক্তি মানুষের কাজ কেড়ে নিলে বেকারের মিছিলে ভরে যাবে দেশ। অন্যদিকে একশ্রেণির আরামপ্রিয় মানুষ হয়ে পড়বে গৃহবন্দি। ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বই পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করবে, ফলে জাতি প্রকৃত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়বে । তবে এটি নির্ভর করবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার ওপরে, যা খারাপ-ভালো দুই দিকই বয়ে আনতে পারে।

তবুও আশার আলো :

পূর্ব সংকেত পড়ার পর মনে হতে পারে, “তাহলে কি ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের জন্য অকল্যাণই বয়ে আনবে?” অবশ্যই না, আলো-আঁধারের মতো সর্বক্ষেত্রে সুবিধা-অসুবিধা থাকবেই, তবে ডিজিটাল বাংলাদেশে কার্য ব্যবস্থাপনাও যদি ডিজিটালভাবে এবং প্রযুক্তি ও মানুষের সমন্বয়ে করা যায়, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদেরকে একটি সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশে নিয়ে যাবে৷ প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে যদি মানুষ কর্মের সুযোগ পায়, তবে তারা কাজে যেমন আনন্দ পাবে, তেমনি তারা হয়ে উঠবে একেকজন দক্ষ কর্মী। তাই শত অন্ধকারের মধ্যেও আমরা আশার আলো দেখি ডিজিটাল বাংলাদেশ মানুষের স্বচ্ছন্দ বিচরণ ।

কিছু প্রত্যাশা :

তারহীন উচ্চগতি ইন্টারনেট ওয়াইম্যাক্স সহজলভ্য হোক এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক— এটাই সবার প্রত্যাশা । আশা করি, বাংলাদেশ সরকার দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের কাজ তাড়াতাড়ি চালু করবে । বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আমরা যদি গ্রামের মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করতে পারি, তাহলেই বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেব গড়ে তোলা যাবে ।

উপসংহার:

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বলতে যা হয়েছে তা অতি সামান্য। যার ফলে স্বাধীনতার এত বছর পরও বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে পারেনি। এখন প্রযুক্তিবিদ্যার বিজয় সারা বিশ্বে ঘোষিত হচ্ছে মহা সমারোহে, তারই অংশ হিসেবে বর্তমান সরকার বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে । বাংলাদেশেও প্রযুক্তির ব্যবহারের উন্নতি সাধন করা কঠিন ।কিছু নয়। এর জন্য শুধু দরকার সরকারের নির্ভুল দিকনির্দেশনা ও কর্মতৎপরতা আর সাধারণ মানুষের সহযোগিতার হাত তবেই একদিন বাস্তবায়ন হবে স্বপ্নের এক দেশ বা ডিজিটাল  বাংলাদেশ ।

Rate this post

You may also like

Leave a Comment