Home রচনা একটি স্মরণীয় সন্ধ্যা রচনা (৬০০ শব্দ) | JSC, SSC |

একটি স্মরণীয় সন্ধ্যা রচনা (৬০০ শব্দ) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

একটি স্মরণীয় সন্ধ্যা রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • সময় ও ঘটনা
  • বর্ণনা
  • নাটক শুরু
  • আমার প্রতিক্রিয়া
  • উপসংহার

একটি স্মরণীয় সন্ধ্যা রচনা

ভূমিকা:

মানবজীবন রকমারি আনন্দ-বেদনার ঘটনায় পরিপূর্ণ। কারাে জীবনে এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যা সে কোনাে কালেই স্মৃতি থেকে মুছে দিতে পারে না। এমনিভাবে সে বিস্মৃত হতে পারে না কোনাে আনন্দঘন ঘটনার স্মৃতিকেও।আনন্দ-বেদনার ঘটনাধারা থেকে মানবমনে কখনাে উঁকি দিয়ে ওঠে কোনাে স্মৃতিময় ঘটনা। আমার জীবনেও এসেছে এমন এক সন্ধ্যা, যা আমার স্মৃতিপটে একটি স্মরণীয় সন্ধ্যা ।

সময় ও ঘটনা:

প্রকৃতিতে শীতের আগমন ঘটেছে মাত্র। শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে না কোথাও। স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে মত্ত অবকাশে মনে বেজায় আনন্দ। গ্রামের ছেলে-বুড়ো কলের মুখে শােনা যাচ্ছে, আসছে বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় ভিটিদাউদপুর ‘দিগন্ত যুব সংঘের উদ্যোগে একটি নাটক মঞ্চস্থ হবে। নাটকটি সফলভাবে মঞ্চস্থ করার জন্যে বেশ তােড়জোড় চলছে। কুশীলব ও আয়ােজকরা প্রতি সন্ধ্যায় প্রাইমারি স্কুলের একটি কামরায় রুদ্ধদ্বার মহড়া করে যাচ্ছেন। আমার কৌতূহলী মনে নাটক দেখার প্রতীক্ষা শুরু হয়ে গেল। কোনাে কোনাে দিন রিহার্সেলের সময় আড়িপাতার চেষ্টা করেছি— কে কোন চরিত্রে অভিনয় করবেন, কার সংলাপ কেমন ইত্যাদি জানার আগ্রহে। অবশেষে এলাে সেই কাঙ্ক্ষিত সন্ধ্যা। হাজার জনতার মিছিলে আমিও যােগ দিলাম। নাটক দেখতে গেলাম ভিটিদাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।

বর্ণনা:

সূর্যাস্তের পর পরই গ্রামের মানুষ এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষ দলে দলে জড়াে হতে থাকে অনুষ্ঠান স্থলে। স্কুলের বারান্দা ঘেঁষে মাঠের এক পাশে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। খােলা মঞ্চের সামনের মাঠে ওপরে সামিয়ানা টাঙিয়ে নিচে সারি সারি চেয়ার পাতা হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেপে মেপে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানাে হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ। সারিবদ্ধ জনতার ফাকে ফাকে বাতি জ্বালিয়ে বাদাম বিক্রেতা ভালােই ব্যবসা করছে দেখলাম। এরই মধ্যে স্থানীয় সম্মানিত চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন বলে মাইকে ঘােষণা দেয়া হলাে । লক্ষ করলাম, শানীয় গণ্যমান্য ও সাধারণ জনতার আগমন এত ব্যাপক হয়েছে যে, রীতিমতাে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। নাটক দেখতে এত মানুষ! আয়ােজকদের পক্ষ থেকে সংঘের সভাপতি সকলের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে নাটক উপস্থাপনের অনুমতি প্রদান করলেন।

নাটক শুরু:

মঞে আলাে-আঁধারির মাঝে নাটক শুরু হয়েছে। নাটকটির নাম ‘আর কত দিন । তন্ময় হয়ে হাজার জনতার মতাে আমিও গভীর মনােযােগ দিয়ে প্রতিটি চরিত্রের সংলাপ উপভােগ করতে লাগলাম । নাটক যতই পরিণতির দিকে এগুচ্ছিল। ততই নাটকের ম্যাসেজটি দর্শকের কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল। ফাকে ফাকে নাটকের দুটি অপ্রধান চরিত্র সাধন’ ও ‘বাধনের সরল। অথচ রসপূর্ণ আলাপচারিতা দর্শক মনে অনেক আনন্দ দিতে সক্ষম হয়েছিল। নাটকটির মূল বক্তব্য ছিল গ্রামের সাধারণ
মানুষদের ওপর সরদার-মাতব্বরদের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র গ্রামের নিরীহ, শক্তিহীন শ্রমিক-মজুরদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে কী করে স্থানীয় মাতব্বররা তাদের রুটি-রুজির ধান্ধা করে আসছে তা খুবই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তােলা হয়েছে এ নাটকে । গ্রামের সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছিল এ সরদারতন্ত্রের ফাঁদে। কোনাে সাধারণ মানুষ বিচারপ্রার্থী হলে সরদাররা উভয়পক্ষের নিকট থেকেই ঘুষ হিসেবে টাকা গ্রহণ করে অন্যায়ভাবে কোনাে এক পক্ষকে শাস্তি বা জরিমানা নির্ধারণ করে সে জরিমানার টাকা থেকেও নিজের ফায়দা করে নিত। সরদার শ্রেণির এহেন কাজের জন্যেই যে সমাজে সুবিচার নির্বাসিত -এ কথাটি নাটকে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। নাটক দেখতে আসা কজন সরদার নাটকের শেষ দেখার আর অপেক্ষা না করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছিল। তাদের বােঝার বাকি ছিল না এ নাটক সরদারতন্ত্রের ওপর একটি চপেটাঘাত। তরুণ নাট্যকার প্রকৃতপক্ষে সমাজে চলতে থাকা সরদারদের অন্যায় কার্যকলাপ নাটকের মধ্য দিয়ে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে উপস্থিত সাধারণ মানুষ অনেক বেশি খুশি হয়েছিল এজন্য যে, তাদের মনের কথাটিই এ নাটকে স্থান পেয়েছে। উপভােগ্য নাটকটি দেখে আমি তৃপ্ত মনে ঘরে ফিরলাম।

আমার প্রতিক্রিয়া:

আর কত দিন নাটকটি আমার দেখা প্রথম মঞ নাটক। এ নাটক দেখে আমি নাটকের শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেছি। একটি নাটক কী করে সমাজের বৈষম্যগুলােকে তুলে ধরে সমাজকে পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারে তা আমি সেদিন দেখেছি। আমার সেদিন নাট্যকার হতে ইচ্ছে হয়েছিল । আমি স্বপ্ন দেখি একজন সফল নাট্যকার হবার। আমার নাটকে উঠে আসবে আজ অথবা আগামীকালের সমাজের কোনাে অসংগতি। ভবিষ্যতে নাট্যকার হবার এ স্বপ্ন আমার মধ্যে রােপিত হয়েছে সেই সন্ধ্যার নাটক দেখেই। তাই সেদিনকার সন্ধ্যার স্মৃতি আজও আমার মনে অবিস্মৃত।

উপসংহার:

মানুষের জীবনে অসংখ্য ঘটনাবলির মধ্যে অল্পই বেঁচে থাকে স্মৃতির ভাণ্ডারে। আমার স্মৃতির ভাণ্ডারে অনাগত। দিনে হয়তাে আরও অনেক ঘটনা এসে স্থান করে নিতে পারে, তবে ফেলে আসা সেই স্মরণীয় সন্ধ্যা আমি কখনো ভুলতে পারব না।

1/5 - (1 vote)

You may also like

Leave a Comment