Home রচনা আমার অবসর বিনােদন রচনা (750 words) | JSC, SSC |

আমার অবসর বিনােদন রচনা (750 words) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

আমার অবসর বিনােদন রচনা লিখন

শহরবাসীর প্রাত্যহিক জীবন যেন একঘেয়েমিতে ভরা। চাকরিজীবী, গৃহিণী কিংবা শিক্ষার্থী— ব্যস্ত শহরের গতিময় জীবন যেন নিংড়ে নেয় সকলের চঞ্চল প্রাণশক্তি। দিনশেষে ক্লান্তি অবসন্ন করে দেহ-মনকে। এ নির্জীবতা আর একঘেয়েমি দূর করে। জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে মানুষ খোজে অবসর। শরণাপন্ন হয় নানা বিনােদনের।

অবসর আছে বলেই মানুষ কাজের প্রেরণা পায়। অবসর মানুষকে দেয় স্বস্তি। পৃথিবীর সুন্দর মানুষের চোখে ধরা দেয় অনুপম হয়ে । আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিপ্লবের যগে এ অবসর বিনােদনের ধরন পাল্টেছে, কিন্তু এর আবেদন বিন্দুমাত্র কমেনি। আমি যেহেতু এখনাে শিক্ষাথী। তাই আমার জীবনে একঘেয়েমি মানে স্কুলের লেখাপড়া । তাই বলে যে আমার অবসর মেলে না তা নয়। অবসর সময়টুকুতে আমি পড়ি, গান শুনি, ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াই। তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় অবসর বিনােদন বই পড়া।

ছেলেবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ। সময়ের সাথে সাথে যা রূপ নেয় শখে, তারপর অভ্যাসে । জন্মদিনে। আমি অনেক বই উপহার পেতাম । তখন স্কুলের পড়া যেন শেষই হতে চাইত না। চোখে কেবল ভাসত নতুন বইগুলাের প্রচ্ছদ। সবগুলাে পড়া শেষ হলে তবেই হতাে শান্তি । নতুন বই থাকলে একই বই বার বার পড়তাম। নানুবাড়ি বেড়াতে গিয়ে বড় মামার বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার দেখে আনন্দে মন নেচে উঠত। ছােট্ট ছেলের খেলনার দোকানের সামনে দাড়িয়ে যেমন আনন্দ হয়, তেমন কোনটা রেখে কোনটা নিই। তবে শিশুতােষ বইগুলােই তখন আমাকে পড়তে দেওয়া হতাে। এখন বড় হয়েছি। এখন কোনাে বাধা নেই। কত ধরনের বই যে আছে মামার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়। ছুটি পেলে তাই। নানুবাড়ি যেতেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালাে লাগে। আমার নিজের সংগ্রহেও রয়েছে নানারকম বই । আমার পছন্দের নতুন কোনাে বই প্রকাশিত হলে আমি কিনে ফেলি, কখনাে উপহার পাই । ইংরেজি সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য, উপন্যাস, আত্মজীবনী, ভ্রমণকাহিনি— সবই আমার প্রিয় । রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায় এদের রচনা আমার দারুণ পছন্দ ভালাে লাগে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা । তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায়। তার ‘ফেলুদার কাহিনিগুলাে আমি আজীবন পড়ে যেতে পারব। ফেলুদার ক্ষুরধার বুদ্ধি।
ও লালমােহন বাবুর অকৃত্রিম সরলতা সব ধরনের পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারে। আর নিজেকে তােপসে ভাবতে কী যে ভালাে লাগে আমার! এমন বই হাতে পেলে অবসর কেটে যায় ঝড়ের গতিতে। তবে কষ্ট হয়, ফেলুদার নতুন নতুন রােমঞ্চকর অ্যাডভেঞার কাহিনি আর তাে লেখা হবে না ।

ইংরেজি সাহিত্যে আমার প্রিয় বই ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’, ‘গালিভার্স ট্রাভেলস, রবিনসন ক্রুসাে’, ‘লিটল ওমেন’ এবং জুল ভার্নের ‘রহস্য সমগ্র । এ বইগুলাে যেন চির সবুজ, কখনাে পুরােনাে হবার নয়। আর ক্ষুদে জাদুকর হ্যারি পটার! আমাদের দেশে বইপ্রেমী কিশাের বয়সিদের ইংরেজি বইয়ে প্রথম হাতেখড়ি হয় এ চমৎকার বইটি দিয়ে। এক-একটি পর্ব কম করে হলেও চার-পাঁচ বার
পড়া হয়ে গেছে আমার । এ যেন সত্যিই জাদু। একবার শুরু করলে শেষ না করা অব্দি থামার উপায় নেই।

অবসরে আমি গানও শুনি। মাঝে মাঝে এমন হয়— বই পড়ছি, গান বাজছে। তবে খুব কম। বেশিরভাগ সময়ই আমি মনপ্রাণ দিয়ে গান শুনি । গানের কথাগুলাে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি, উপভােগ করি সুর। সে ইংরেজি, বাংলা যে ভাষারই হােক না কেন, শ্রুতিমধুর হলেই আমি সন্তুষ্ট। কানে একজোড়া হেড-ফোন গুঁজে দিয়ে আমি সুরের রাজ্যে হারিয়ে যাই । কখনাে রবীন্দ্রসংগীত, কখনাে অঞ্জন দত্ত, কখনাে সােলস। ব্যান্ডের গান আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে । আমাদের দেশের সাের্স, মাইলস, এলআরবি, ওয়ারফেজ, অর্থহীন ছাড়াও আমার সংগ্রহে রয়েছে বেশ ভালাে কিছু আধুনিক ইংরেজি ব্যান্ডের গান। বর্তমানে গানের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে। এ প্রযুক্তি গানের গুণগত মানের ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অনেক নতুন
আনকোরা মুখ বাংলাদেশে গানের জগতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে প্রাইভেট রেডিও স্টেশন।

প্রযুক্তি মানুষের বিনােদনের পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেট তেমনই একটি প্রযুক্তি। চার দেয়ালের ভেতর খুঁজে নেয়া। বিনােদনের মধ্যে কিছুকাল আগেও সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল টেলিভিশন। কোনাে নির্দিষ্ট চ্যানেল নয়, রিমােট চেপে দেশ-বিদেশের রকমারি অনুষ্ঠানের মধ্য থেকে পছন্দসই একটা বেছে নিয়ে অবসর কাটানাে যেত। আমিও ব্যতিক্রম নই । অবসরে কখনাে কখনাে বসে যাই কম্পিউটারের সামনে। ফেসবুক খুলে বসি। আরও উইনডাে খুলে চলে যাই বিডি নিউজের ওয়েবসাইটে চোখ বুলিয়ে নেই সংবাদ শিরােনামে। কোনাে গান পছন্দ হলে সংগ্রহ করে নেই । ফেসবুকে বিভিন্ন উপায়ে বন্ধুদের সাথে যােগাযােগ করি, মেসেজ পাঠাই— সবই হয়ে যায় মাউসের কয়েকটা ক্লিকের সাহায্যে। এগুলােই আমার অবসরের বিনােদন। পড়ালেখার চাপে নতি স্বীকার করে যখন অবসরে হারিয়ে যাই তখন ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের অমর কিছু পর্ভূক্তি, মনে পড়ে সােলসের ব্যস্ততা’ গানটির কথা । মাঝে মাঝে ভাবি, সচ্ছল পরিবারে জন্মেছি বলেই। হয়তাে আমার এমন অবসুর মেলে। সেই অবসরে আমি নানা ধরনের আনন্দ বিনােদন খুঁজে পাই। আমারই বয়সি, আমারই সহপাঠী অনেকেই আছে যাদের লেখাপড়ার খরচা নিজেকেই চালাতে হয় অবসরে তারা ছাত্র পড়িয়ে রােজগার করে।

আমারও ইচ্ছে করে ছাত্র । কিন্তু বাবা-মা দেবেন না। তারা বলেছেন, আগে কলেজে ওঠো। হ্যা, কলেজে উঠে আমিও
টিউশনি করব । তবে অবশ্যই একটু অবসর রেখে দেব বই পড়ার জন্যে। নতুন বইয়ের কাগজের ঘ্রাণ আমাকে সব সময় আকর্ষণ করে। বই মানুষকে সৃষ্টিশীল করে, খুলে দেয় চিন্তাশক্তির দুয়ার, বিস্তৃত করে জ্ঞানের পরিধি। তাই বই পড়াই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ বিনােদন।

5/5 - (3 votes)

You may also like

Leave a Comment