Home রচনা বন্যা ও এর প্রতিকার রচনা | JSC, SSC |

বন্যা ও এর প্রতিকার রচনা | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

বাংলাদেশের বন্যা ও এর প্রতিকার

  • ভূমিকা
  • বাংলাদেশে বন্যার কারণ
  • বাংলাদেশের বন্যার প্রকৃতি
  • বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি
  • বন্যা সমস্যা সমাধানের উপায়
  • উপসংহার

বাংলাদেশের বন্যা ও এর প্রতিকার রচনা

ভূমিকা: 

বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও অস্তিত্বের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে নদী। বাংলার রূপ তার শ্যামল মাটি, সবুজ বৃক্ষরাজি আর রুপালি নদনদীতে। সুজলা-সুফলা বাংলার শস্যশ্যামল রূপ অজস্র নদীরই দান। কিন্তু এ নদীই কখনাে কখনাে হয়ে ওঠে দুঃখের কারণ। দু কূল ছাপিয়ে প্রবল গতিসম্পন্ন নদী বন্যার ভংকর মূর্তি নিয়ে কেবল এগিয়ে চলে। ডুবিয়ে দেয়। গ্রামের পর গ্রাম, শহর, জনপদ। অনেক প্রাণহানি ঘটে। বাড়িঘর, সহায়সম্বল হারিয়ে মানুষ হয়ে পড়ে নিঃস্ব। প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার কবলে পড়ে। দেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন এতে ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হয় ।

বাংলাদেশে বন্যার কারণ:

 চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়া বাংলাদেশের কোনাে অংশই সমুদ্র সমতল থেকে পনেরাে বিশ ফুটের বেশি উঁচু নয়। রং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্রম-নিম্ন । তাই বিভিন্ন কারণে জলস্ফীতি ঘটলে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যা দেখা দেয় যেসব কারণে নদীর জলস্ফীতি হয়ে থাকে— 

১.বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর উৎসমুখ সীমান্তের ওপারে । উৎস অঞলে ভারী বৃষ্টিপাত হলে কিংবা ব্রফ গলে নদ-নদীগুলাে প্রবল পানির তােড়ে বিশাল আকার ধারণ করার ফলে;

২. হিমালয় অঞ্চলে সংঘটিত ভূ-আন্দোলনের ফলে;

৩. অববাহিকা অঞ্চলে প্রবল বর্ষণের ফলে;

৪. অপেক্ষাকৃত ছােট নদীগুলাের ‘রিভার বেঙ’ বা নদীগর্ভ পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীগুলাে বর্ষার অতিরিক্ত পানি দুত সমুদ্রে বয়ে নিয়ে যেতে পারে না; ৫. অববাহিকা থেকে আসা মাটি, শিলাখণ্ড, গাছপালা, বর্জ্য ইত্যাদি জমে নদীর গভীরতা ও পানি বহন ক্ষমতা হ্রাস পেলে ;

৬. অনেক সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিরিক্ত পানি বহনকারী নদীগুলাে মােহনায় বাধা পেয়ে সমুদ্রে পানি নিষ্কাশন করতে পারে না বলে ;

৭. নদীর গতিপথ পরিবর্তন, অববাহিকায় ভূমিক্ষয়, নদীতে চর সৃষ্টি, পলি সঞয় প্রভৃতি কারণে ;

৮. নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্রে জলােচ্ছ্বাস হলে ;

৯. দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত দীর্ঘস্থায়ী হলে ;

১০. জলবায়ুতে এলনিন্যে-লানিনাের উপসর্গে বিশ্ব আবহাওয়া বিপর্যস্ত হবার ফলে।

বাংলাদেশের বন্যার প্রকৃতি: 

বাংলাদেশে তিন ধরনের বন্যা সংঘটিত হয় –

১. আকস্মিক বন্যা – পাহাড়ি ঢল থেকে কিংবা স্বল্প সময়ে সংঘটিত প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে;

২. মৌসুমি বন্যা – ঋতুর প্রভাবে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ; এবং

৩. জোয়ার সৃষ্ট বন্যা – প্রবল জোয়ারের ফলে ভূভাগের নিষ্কাশন প্রণালি আবদ্ধ হয়ে যাবার ফলে ।।

বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি:

 বিগত অর্ধশতকে বাংলাদেশ বহুবার বন্যার শিকার হয়েছে। স্বাধীনতার আগে ১৯৫৪ সালের বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। ১৯৫৫, ‘৬২ ও ‘৬৬ সালেও বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের বন্যার ফলে বাংলাদেশে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯৮৮ সালের বন্যায় মৃতের সংখ্যা ছিল দু হাজার। সবকটি বন্যাতেই ফসল ও সম্পদের ক্ষতি হয় ব্যাপক। ১৯৯৮ সালের বন্যার ব্যাপকতা, স্থায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রচুর। তৎকালীন ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫২টিই বন্যা কবলিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকাও ছিল অবরুদ্ধ । এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় তিন কোটি মানুষ। লাখ লাখ ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টন। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যা। ২০০৪ সালে সংঘটিত বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শরীয়তপুর, ঝিনাইদহ, বগুড়া, সিলেট, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি জেলা। ২০০৭ সালে রংপুর, সিরাজগঞ্জ, মাদারিপুরসহ বেশ কয়টি জেলা বন্যা কবলিত হয়। ২০১৭ সালে দেশে বড় ধরনের বন্যা হয়। এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের উত্তরাঞল । এছাড়াও মধ্যাঞলের অনেকগুলাে জেলা এবং দক্ষিণের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যার কবলে পড়ে। মৃত্যুর হার কম হলেও এ বন্যা ১৯৯৮ সালের চেয়েও প্রলয়ংকরী হিসেবে দেখা দিয়েছিল। অসংখ্য মানুষ হারায় বাঁচার সম্বল ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলি জমি। অর্থনীতি ও শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, বাঁধ ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যোগাযােগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। সার্বিকভাবে উন্নয়নের গতি মন্থর হয়ে পড়ে।

বন্যা সমস্যা সমাধানের উপায়: 

বাংলাদেশের মতাে সমভূমি অঞ্চলে বন্যা সমস্যা সমাধানে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া সহজসাধ্য নয়। তারপরও জানমাল রক্ষার্থে যেসব পদক্ষেপ নেয়া জরুরি তা হলাে:

১. বন্যা সম্পর্কে সতর্কীকরণের ব্যবস্থা নেওয়া;

২. জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ;

৩. গ্রামাঞ্চলে উঁচু করে ভিটেবাড়ি নির্মাণ;

৪. ত্রাণ কার্যক্রম নিশ্চিত ইত্যাদি।

তবে পরিকল্পিত সমাধানের জন্য সীমান্তবর্তী দেশগুলাে যেমন, ভারত, নেপাল, মায়ানমার অর্থাৎ যেসব দেশের সাথে বাংলাদেশের নদী সংযােগ রয়েছে তাদের সাথে যৌথভাবে কার্যকর বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলাে খনন করে প্রবাহ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। নদীর দু পাশে বাঁধ নির্মাণ করা হলে একদিকে বন্যার প্রকোপ কমবে, অন্যদিকে নদীভাঙন রােধ সম্ভব হবে । রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যাতে নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি না হয়। নদীতীরে ব্যাপক বৃক্ষরােপণ, নদী দখল রােধ, নদীতীরে শিল্পায়ন ও বসতি নির্মাণ বন্ধ করা হলেও বন্যার প্রকোপ কমানাে যায়।

উপসংহার: 

বন্যা নিয়ন্ত্রণের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহুলাংশে নির্ভরশীল । বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও এর ভয়াবহ প্রভাব কমাতে সরকার বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিছু বেসরকারি সংস্থাও এ ব্যাপারে কাজ করছে। তবে এর দুত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে সরকারকে এ ব্যাপারে আরও অন্তরিক হতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতে হবে

5/5 - (2 votes)

You may also like

Leave a Comment